ছাত্র-ছাত্রীদের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়াবলি
ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ লালমনিরহাট রংপুর বিভাগ তথা দেশের উত্তরাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রংপুর এরিয়া সদর দপ্তরের সক্রিয় তত্ত্বাবধানে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। একটি সুশৃঙ্খল ও সুশীল জাতি গঠনে এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গৌরবময় ভূমিকা সর্বজনবিদিত। গৌরব ও ঐতিহ্যের এ চলমান ধারাকে আরো গতিশীল ও সমুন্নত রাখতে হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার সার্বক্ষণিক অনুশীলন অত্যন্ত অপরিহার্য। উন্নত শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সকল প্রকার শৃঙ্খলা পরিপন্থি আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং এ প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নকালে নিম্নলিখিত অবশ্য করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে।
ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অবশ্য করণীয় বিষয়সমূহ:
- যথাসময়ে (ডায়েরিতে উল্লিখিত শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সময়সূচি অনুযায়ী) প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া এবং প্রাত্যহিক সমাবেশ/ফরম মিটিং-এ অংশগ্রহন করা।
- যথাযথ ইউনিফরম পরিধান করে প্রতিষ্ঠানে আসা (নির্ধারিত জুতা, মোজা, বেল্ট, ব্যাজ, নেমপ্লেট, আইডি কার্ড ইত্যাদিও ইউনিফরমের অংশ)। পরিষ্কার ও ইস্ত্রি করা পোশাক পরিধান করা এবং শার্ট ইন করে পরা। শীতকালে ছাত্ররা অবশ্যই নির্ধারিত শীতকালীন পোশাকের সাথে টাই পরবে।
- ছুটির পর অকারণে ক্যাম্পাসে অবস্থান না করা বা অযথা ঘোরাঘুরি না করা।
- লেইজার পিরিয়ডে এবং টিফিন পিরিয়ডে যত্রতত্র বিশৃঙ্খলভাবে বিচরণ না করে লাইব্রেরি, কমনরুম ও ক্যান্টিন সুবিধা গ্রহন করা। খেলার মাঠে অথবা পি.টি ক্লাসে শৃঙ্খলা বজায় রাখা।
- শ্রেণিকক্ষে অবস্থানকালে লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়া, ক্লাসের কাজ ও বাড়ির কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করা এবং তা সংশ্লিষ্ট বিষয় শিক্ষককে দেখানো। দুই পিরিয়ডের মধ্যবর্তী সময়ে নিজ নিজ আসনে অবস্থান করা।
- কমপক্ষে একটি এবং সর্বাধিক তিনটি সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম ও খেলাধুলায় অবশ্যই জড়িত থাকা এবং নিয়মিত অংশগ্রহণ করা।
- প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সকল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা।
- রুটিন মাফিক সকল তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক ক্লাসে উপস্থিত থাকা।
- ছুটি ভোগ করার পূর্বে আবেদনপত্রের মাধ্যমে তা অনুমোদন করিয়ে নেয়া। আকস্মিক অসুস্থতা/সংগত কারণে ০৩ (তিন) দিনের অধিক ছুটি ভোগ করলে, সেক্ষেত্রে উপস্থিতির দিন অভিভাবক কর্তৃক স্বাক্ষরিত আবেদনপত্র দাখিল করতে হবে। প্রতিষ্ঠানে আসার পর ছুটির প্রয়োজন হলে অবশ্যই অভিভাবকের স্বাক্ষরসহ আবেদনপত্র শ্রেণি শিক্ষকের মাধ্যমে দাখিল করতে হবে।
- নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর ০৭ দিনের মধ্যে ইউনিফরম তৈরি করতে হবে।
- চুল, দাঁত ও নখ বিশেষভাবে পরিষ্কার রাখা। নিয়মিত গোসল করা এবং শারীরিক দুর্গন্ধ এড়ানোর ব্যাপারে সতর্ক থাকা।
- ছাত্রদের চুল ছোট রাখা (চুলের দৈর্ঘ্য হাফ ইঞ্চির বেশি হবে না এবং তা কানের পাতা স্পর্শ করবে না ও চিপ ছোট হবে)। ছাত্রীরা চুল দুই বেণী/ ঝুঁটি করবে।
- লাইব্রেরি ক্লাসে উপস্থিত থাকা এবং অবসর সময়ে লাইব্রেরি ওয়ার্ক ও পুস্তক লেনদেন করা।
- শ্রেণিকক্ষ এবং ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সহায়তা করা।
- অভিভাবক দিবসে নিজ নিজ অভিভাবকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনবোধে শ্রেণিশিক্ষক/অধ্যক্ষের সাথে অভিভাবকের যোগাযোগে সহযোগিতা করা।
- শ্রেণিশিক্ষক/বিষয়শিক্ষক ডায়েরিতে মন্তব্য লিখলে তা অবশ্যই অভিভাবককে অবহিত করে পুনরায় সংশ্লিষ্ট শ্রেণিশিক্ষক/বিষয়শিক্ষককে দেখানো।
- সিনিয়র ছাত্র-ছাত্রীরা জুনিয়র ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে ও জুনিয়র ছাত্র-ছাত্রীরা সিনিয়র ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে ভাইবোনের মতো প্রত্যাশিত দায়িত্বশীল আচরণ করবে এবং সর্বদা সত্য কথা বলবে।
- প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব/ আদেশ পালন করা।
- কারো বাগদত্তা হলে বা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে সঙ্গে সঙ্গে তা কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অবশ্য বর্জনীয় বিষয়সমূহ:
- দেরি করে প্রতিষ্ঠানে/ ক্লাসে উপস্থিত হওয়া এবং ফরম মিটিং/ প্রাত্যহিক সমাবেশে অংশগ্রহণ না করা।
- প্রতিষ্ঠানে/ ক্লাসে ইউনিফরম পরিধানে কোনো অনিয়ম করা। মিথ্যা কথা বলা।
- পূর্বানুমতি ছাড়াই ক্লাসে অনুপস্থিত থাকা এবং ছুটির পূর্বে বিনা অনুমতিতে প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করা।
- ছেলেদের চুল হাফ ইঞ্চি অপেক্ষা বড় রাখা কিংবা মাথা ন্যাড়া করা (অসুস্থতা বা ধর্মীয় কারণ ব্যতীত)।
- মেয়েদের চুল খোলা রাখা, চুল পাম্প করা বা কোনো প্রকার রং করা/চোখের রং পরিবর্তনের জন্য কসমেটিক লেন্স ব্যবহার করা।
- কোনো প্রকার অলংকার (ফ্রেন্ডশীপ ব্যান্ড, মাথায় আকর্ষণীয়/ রং চং ক্লিপ বা ব্যান্ড, মল বা নূপুর, ঝুলন্ত দুল, আংটি ইত্যাদি) ব্যবহার করা।
- নখ বড় রাখা, নেইল পালিশ এবং হাতের ওপর মেহেদি দেয়া। লিপস্টিক, রুজ বা এ ধরনের কোনো প্রকার প্রসাধনী ব্যবহার করা (কেবল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা এ ব্যাপারে অনুমতি পেতে পারে)।
- বড় আকৃতির এবং মিউজিক্যাল হাতঘড়ি ব্যবহার করা। বেমানান/ চওড়া আকৃতির বেল্ট পরিধান করা।
- মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, মেমোরি কার্ড, মডেম, পেনড্রাইভ, এমপিথ্রি/ এমপিফোর, ক্যাসেট, সিডি, লেজার লাইটার, ক্যামেরা, রঙিন সানগ্লাস, অপাঠ্য বই, গাইড বই, ক্রিকেট বল বা ব্যাট, টেনিস বল, হকিষ্টিক, ব্যাডমিন্টন র্যাকেট, খেলনা জাতীয় কোনো কিছু সঙ্গে রাখা বা ব্যবহার করা।
- মোজা ছাড়া জুতা পরা, গেঞ্জিবিহীন শার্ট পরিধান করা, মাথায় ক্যাপ পরা।
- ক্যান্টিনের বাইরের দোকান বা ফেরিওয়ালার নিকট থেকে টিফিন দ্রব্যাদি ক্রয় করা এবং খাবার জিনিস যত্রতত্র হেঁটে হেঁটে খাওয়া, শ্রেণি কক্ষে চুইংগাম চিবানো।
- যে কোনো পরীক্ষায় কোনো প্রকার অসদুপায় অবলম্বন করা।
- লাইব্রেরিতে বইয়ের পাতা কিংবা পত্র পত্রিকার অংশবিশেষ কেটে ফেলা বা বইয়ের পাতায় বা পত্র-পত্রিকায় অশালীন/ অশোভন কিছু লেখা।
- প্রতিষ্ঠানের যেকোনো জিনিস এবং সহপাঠীর কোনো কিছু তাকে না জানিয়ে নেয়া, প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বা সহপাঠীর কোনোকিছু নষ্ট করা।
- ক্যাম্পাসের ভেতরে বা বাহিরে ধূমপান করা, পান খাওয়া বা এ জাতীয় কোনো অনাকাঙ্খিত দ্রব্য গ্রহণ করা বা সঙ্গে রাখা।
- ডেস্ক, নোটিশ বোর্ড/হোয়াইট বোর্ড, দেয়াল, টয়লেট ইত্যাদিতে আজেবাজে বা আপত্তিকর কোনোকিছু লেখা এবং পায়ের ছাপ দেয়া।
- প্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিনে ও গার্ডিয়ান শেডে, ক্যান্টিনের ভেতরের অংশে ক্লাশ চলাকালীন বা অন্য সময়ে আড্ডা দেয়া (গার্ডিয়ান শেড ছাত্রদের আওতা বহির্ভূত এলাকা)।
- ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে কথাবার্তা, কোনো প্রকার চিঠিপত্র বা চিরকুট বিনিময়, ক্লাশ পালিয়ে গল্পগুজব করা। ছাত্রীদের কেনাকাটার সময় ক্যান্টিনের আশেপাশে ছেলেদের ঘোরাফেরা করা, প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নকালীন ব্যক্তিগত সম্পর্ক সৃষ্টি করা অথবা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, সেটা গোপনে অথবা প্রকাশ্যে যা-ই হোক না কেনো।
- ক্লাসের বাইরে, কমনরুমে বা খেলার মাঠে সিনিয়র (উপরের ক্লাসের) ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে, যেকোনো শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীর সাথে খারাপ আচরণ করা।
- প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারিকৃত যেকোনো আদেশ-নিষেধ অমান্য করা।
১। তাকে নির্ধারিত পোশাক পরিধান করতে হবে।
২। পরিচয়পত্র সাথে রাখতে হবে এবং গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
৩। কোন ক্রমেই মোবাইল ফোন সঙ্গে রাখতে পারবে না।
এই আদেশ অমান্যকারী শিক্ষার্থীকে প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করা হবে।
উপরে বর্ণিত আদেশ-নিষেধসমূহ অমান্য করলে প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংশোধন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।